Monday, October 29, 2012

দুর্গাপুজোর রঙ্গ

বঙ্গদেশে মোচ্ছব শেষ হল। দুর্গাপুজোর মোচ্ছব। আবাল বৃদ্ধ বনিতার ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। ঝাঁ চকচকে মন্ডপে কর্পোরেট কায়দায় দেবী আরাধনা হল। স্পনসরশিপ সহযোগে। কোন কোন পুজোতে আবার ব্র্যান্ড আম্বাসাডার ও ছিল। টলিউডি দুষ্টু মিষ্টি নায়িকা। প্রাক-পুঁজিবাদী সংস্কৃতির প্রতিভু ধর্মের সঙ্গে আধুনিক বাজার অর্থনীতির কি আশ্চর্য সহাবস্থান । নাকি বলা ভাল সহবাস।

               
তবু ছেলে বুড়ো সব আল্ল্রাদে আটখানা । আর যাই হোক এই কদিন জীবনের দুঃখ কষ্টতো ভুলে থাকা গেল। পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়া , নারী নির্যাতন , সরকারী হাসপাতালে শিশুমৃত্যু , ফসলের দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা , জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনীর তান্ডব ইত্যাদী প্রতিদিনকার গায়ে জ্বালা ধরানো , পিঠে চাবুক মারা বাস্তবতার থেকে তো রেহাই মিলল , অন্তত  কয়েকটা দিন।

 দেশের মাথা , হত্তা কত্তা বিধাতা মন্ত্রী , আমলা , রাজনীতিক থেকে শুরু করে বাজার অর্থনীতির ঈশ্বর থুড়ি পুঁজিপতি সবাই উল্লসিত। গ্রাম বাংলায় মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের ধ্বজাধারী জোতদার , মহাজনরাও মহাখুশী । প্রতিদিন রাস্তায় মিছিল নেই । পথ অবরোধ নেই। বনধ নেই। রাস্তাঘাটে একটু ভিড় আছে বটে । তবে তা উৎসব উন্মত্ত জনতার। শাসক শ্রেণির প্রতি তাদের কোন ক্ষোভ নেই। নেহাতই নিরামিষ হইচই।

ওস্তাদের মার যেমন শেষরাতে , তেমনি আমাদের ধর্মবাবুর খেল ও শেষবেলায় । পাঁচ অঙ্কের দুর্গাপুজোর শেষ অঙ্কে । মানে দশমীতে । সকাল থেকেই টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে শুরু হল সিঁদুর খেলার সরাসরি সম্প্রচার। শহরের নামী দামি পুজোমন্ডপ থেকে। রূপালী পর্দা থেকে বোকা বাক্স - কোন জায়গার নায়িকারাই বাদ নেই। সবাই হাজির সিঁদুর খেলতে । শোনা যায় এনাদের নাকি ভাড়া করে নিয়ে যায় বিভিন্ন বড় বড় পুজোর উদ্যক্তারা। অনেকে একি দিনে অনেক মন্ডপে ভাড়া খাটেন। গ্রামের দিকে যেমন ভাড়া করে ফুটবলার বা ক্রিকেটার নিয়ে যাওয়া হয়। খেপ খেলা যাকে বলে আর কি। সিঁদুর খেলার খেপ। সিঁদুর খেলোয়াড় For Hire .
আর কত রঙ্গ দেখা বাকী আছে আমাদের !